Home Featured পার্টিগেইট কেলেংকারিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর গদি নড়বড়ে

পার্টিগেইট কেলেংকারিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর গদি নড়বড়ে

Mukto Chinta
0 comment 339 views

নাজমুল আশরাফ
‘পার্টিগেইট’ কেলেংকারিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের গদি নড়বড়ে হয়ে গেছে। বিরোধী দলের পাশাপাশি নিজ দলের পক্ষ থেকেও তাঁর উপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। সবশেষ বরিস জনসন সরকারের চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। তাদের একজন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগও এনেছেন। হাউয অব কমন্সেও তাঁকে মিথ্যা বলা ও হাউযকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ এনেছেন সরকারি ও বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন এমপি। সব মিলিয়ে বর্তমান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এখন চরম সংকটে আছেন।

যেভাবে সংকটের শুরু
কিছুদিন আগে বৃটিশ গণমাধ্যমে খবর বের হয়, দুই বছর আগে কোভিড লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও সরকারি বাসভবন ১০ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রীটে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিবিসি’র তথ্য অনুযায়ী, মে ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত ১০ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রীটে কমপক্ষে ১৮টি অনুষ্ঠান হয়েছে। এরমধ্যে অন্তত ৬টিতে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন। এ নিয়ে হাউয অব কমন্স উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। জনগণকে লকডাউনে আটকে রেখে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানসহ একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধী দলের সদস্যরা। তাদের সাথে যোগ দেন সরকারি দলের অনেকে। তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবি ওঠতে থাকে। পার্লামেন্টের বাইরেও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ জানাতে শুরু করে। সরকারপ্রধানের এমন বেআইনী, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অনৈতিক কাজে ফুঁসে ওঠে বৃটেইনের সাধারণ মানুষও। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তারপরও পার্লামেন্টের ভিতরে-বাইরে ক্ষোভ চলতে থাকায় সবাইকে অপেক্ষা করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। চার সপ্তাহ অপেক্ষার পর তদন্তের যে রিপার্ট পাওয়া যায়, সেটাও আবার অসম্পূর্ণ।

তদন্ত রিপোর্টের বিস্ফোরক তথ্য
ক্যাবিনেট অফিসের দ্বিতীয় স্থায়ী সচিব সু গ্রে’র নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গত ৩১ জানুয়ারি তাদের সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে ১০ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রীটে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও কার্যালয়ের গুরুতর ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ওয়াটারগেইট’ কেলেঙ্কারির আদলে এসব ঘটনাকে ‘পার্টিগেইট’ হিসাবে উল্লেখ করছে বৃটিশ গণমাধ্যম। সু গ্রে’র রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ডাউনিং স্ট্রীটের ১৬টি ঘটনা তাঁর তদন্তের আওতায় এসেছে। এরমধ্যে ১২টির তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্ত রিপোর্টে সু গ্রে লিখেছেন, জনগণের জন্য কোভিড নিষেধাজ্ঞা দিলেও, সরকার নিজেই সেটা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরো লিখেছেন, ডাউনিং স্ট্রীটে ক্যাবিনেট অফিসসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দিতে ও সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে এমন কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে, যেগুলো হওয়া উচিত ছিল না, এবং আরো কিছু অনুষ্ঠান যেভাবে হয়েছে, সেভাবে হওয়া ঠিক হয়নি। মহামারির সময় সেখানকার বাগানটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুমোদন বা নজরদারি ছাড়াই সেখানে মানুষের জমায়েত হয়েছে, যা ঠিক ছিল না।


রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, যারা এসব ঘটনা দেখেছেন, তারা আপত্তি জানাতে চাইলেও, তাদের সেই সামর্থ্য ছিল না। সাতশো’র বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সু গ্রে এই রিপার্ট তৈরি করেছেন। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট অনেক ইমেইল, টেক্সট ম্যাসেজ, ছবি এবং বিভিন্ন ভবনে ঢোকা ও বের হওয়ার তথ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছেন তিনি। নেতৃত্বের ব্যর্থতার পাশাপাশি, অতিরিক্ত মদপান এবং অসদাচরণ সম্পর্কে স্টাফদের আপত্তি জানাতে না পারার সংস্কৃতির কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন সু গ্রে। পুলিশের তদন্তাধীন থাকায়, জমায়েতগুলোতে কোভিড নির্দেশনা মানা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কিছু না বললেও, এসব ব্যাপারে অবিলম্বে পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এই সরকারি কর্মকর্তা। গ্রে বলেছেন, সরকারের সবখানেই এ ধরণের ঘটনার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এরজন্য পুলিশের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নাই।
জনসম্মুখে প্রকাশের তিন ঘন্টার মধ্যেই সু গ্রে’র তদন্ত রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। রিপোর্ট প্রকাশের এক ঘন্টা পরেই হাউয অব কমন্সে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। লকডাউনে পার্টি করার জন্য দু:খ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি সু গ্রে’র তদন্তের সাধারণ ফলাফলের পুরোটাই মেনে নিচ্ছেন। রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয় নাই। সু গ্রে’র রিপোর্টে পার্লামেন্টে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। একের পর এক প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন সরকারি ও বিরোধী বেঞ্চের সদস্যরা।
মিথ্যা বলা ও হাউযকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বার বার অভিযুক্ত করেন এসএনপি নেতা ইয়েন ব্যাকফোর্ড। এক পর্যায়ে স্পিকার তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি তা না করায় স্পিকার তাঁকে হাউয থেকে বের করে দেন। একইভাবে নিজ দলের ক্ষোভের মুখেও পড়েন প্রধানমন্ত্রী জনসান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিযা মে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর আশপাশের লোকজন, হয় কোভিড বিধি পড়ে দেখেন নাই বা বোঝেন নাই, নয়তো তিনি ভেবেছেন, এসব তাঁর জন্য প্রযোজ্য না।
সরকারি ও বিরোধী দলের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন। অতীতের ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। সামনে যাই হোক না কেনো, একটা বিষয় নিশ্চিত যে, টিকে থাকার সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসান। সেদিন হাউযের ভিতরের ক্ষোভ বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। বরিস জনসান যখন তাঁর গাড়িতে ওঠতে যান, তখন এক নারী চিৎকার করে বলতে থাকেন, নেতৃত্বে ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
লকডাউনে পার্টি করার ঘটনা প্রধানমন্ত্রী বরিসানকে সবচেয়ে বড় সংকটে ফেলেছে। সু গ্রে’র তদন্ত রিপোর্ট সেই সংকটকে আরো গভীর করেছে। তদন্ত শুরুর পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের বড় শিরোনাম সু গ্রে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন সাহসী পদক্ষেপ সব মহলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। তাঁকে নিয়ে এখন মানুষের কৌতুহলের শেষ নাই। কে এই সু গ্রে? কি তাঁর পরিচয়?

কে এই সু গ্রে?
পুরো নাম সুসান গ্রে। তবে সু গ্রে হিসাবেই বেশি পরিচিত। ২০২১ সালের মে মাসে তিনি ক্যাবিনেট অফিসের দ্বিতীয় স্থায়ী সচিব হিসাবে যোগ দেন। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি তাঁর বস। তাঁর বসের বস হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ তিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, যিনি সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে এমন সাহসী রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট আবার মেনেও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৃটিশ গণতন্ত্র বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।


সু গ্রে প্রশাসনের এমন একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা, যার কথা এতোদিন খুব কম মানুষই জানতো। অথচ এখন তিনি সারাদেশে, এমনকি দেশের বাইরেও আলোচিত। সু গ্রে’র জন্ম ১৯৫৭ বা ১৯৫৮ সালে পূর্ব লন্ডনে। তাঁর বাবা ছিলেন আসবাবপত্র বিক্রেতা এবং মা ছিলেন মদ পরিবেশনকারী। তিনি ক্যাথলিক স্টেইট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৭৫ সালে বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চিšন্তা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি চাকরি ছেড়ে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত শহর নিউরিতে নিজের পাব বা মদের দোকান পরিচালনা করেন। নব্বুই দশকের শেষ দিকে তিনি ক্যাবিনেট অফিসে যোগ দেন। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ক্যাবিনেট অফিসের ডিজি হিসাবে কাজ করেন। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ছিলেন নর্দার্ন আয়াল্যান্ডের ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের স্থায়ী সচিব। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন সেখানকার জনপ্রশাসনের প্রধান হিসাবে কাজ করতে। তখন বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সু গ্রে বলেন, ওই দায়িত্বটা না পাওয়ার কারণ সম্ভবত, মানুষ ভাবে, তিনি অতিমাত্রায় বিরোধীতাকারী এবং বিঘœ সৃষ্টিকারী। গ্রে বলেন, তিনি আসলে দুটাই। তাদের ধারণা ছিল, তিনি অনেক বেশি পরিবর্তন আনবেন। ২০২১ সালের মে মাসে তিনি হোয়াইট হলে ফিরে আসেন, যোগ দেন ক্যাবিনেট অফিসের দ্বিতীয় স্থায়ী সচিব হিসাবে। গত ডিসেম্বরে লকডাউনে পার্টি করার খবর বের হলে প্রথমে তা তদন্ত শুরু করেন ক্যাবিনেট সেক্রেটারি সাইমন কেইস। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জড়িত থাকার কথা শুনে তিনি সেই তদন্ত থেকে সরে যান। এরপর সু গ্রে’কে যখন ‘পার্টিগেইট’ কেলেংকারির তদন্ত করতে দেয়া হয়, তখন ডাউনিং স্ট্রীটের সাবেক উপদেষ্টা টম কেলি বিবিসিকে বলেন, এই কাজে সু গ্রে খুবই অস্বস্তি বোধ করবেন। কারণ তিনি মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা পছন্দ করেন না। তবে তিনি নিশ্চয়ই এটাকে তাঁর দায়িত্ব এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে নেবেন। সত্য উঘাটন করতে তিনি সততা ও সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়েই কাজটা করবেন।
তদন্তটা নিজের বসের বিরুদ্ধে হওয়ায়, কাজের ক্ষেত্র নীমিত করে দেয়ার আশংকাও করেন অনেকে। তবে বেলফ্যাস্ট টেলেগ্রাফের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড সম্পাদক স্যাম ম্যাকব্রাইড বলেন, সু গ্রে এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি যতো বেশি সম্ভব স্বাধীনভাবে কাজ করেন। পেশাগত জীবনের শেষপ্রান্তে থাকার কারণে তিনি আরো ওপরে ওঠা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। এতোদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে নীরবে কাজ করাসহ তাঁর এতো বেশি অভিজ্ঞতা যে, তাঁর সাথে অনুপযুক্ত আচরণ করা যে কারো জন্যই খুবই কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সু গ্রে সম্পর্কে এই দু’জনের কথাই সত্য হয়েছে। তিনি স্বাধীনভাবে সত্য তুলে আনার কাজটা সাহস ও পেশাদারিত্বের সাথেই করেছেন। এই কাজে কেউ তাঁকে বাধাও দেন নাই। এমনকি সরকারও তার তদন্ত রিপোর্টের বিরোধীতা করে নাই। সত্যিকার গণতন্ত্রের দেশ বলেই তা সম্ভব হয়েছে। তবে এটাই ঠিক যে, সব সরকারি কর্মকর্তাই সু গ্রে’র মতো না।
‘পার্টিগেইট’ তদন্ত নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হিমশিম খাচ্ছেন, তখনি তাঁর ওপর নেমে এলো আরো এক বিপদ। গত ৩ জানুয়ারি একই দিনে পদত্যাগ করেন বরিস প্রশাসনের চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই একের পর এক পদত্যাগ করেন চীফ অব স্টাফ ড্যান রযেনফিল্ড, ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশন্স জ্যাক ডয়েল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি মার্টিন রেনল্ডস, যিনি আলোচিত গার্ডেন পার্টিতে শ’খানেক মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।,
চতুর্থ কর্মকর্তা, হেড অব পলিসি মুনিরা মির্যার বিদায় একটি বিস্ফোরক ঘটনা। ১০ বছরের বেশি সময় তিনি জনসানের বন্ধু ও রাজনৈতিক আস্থার মানুষ ছিলেন। বরিসন যখন লন্ডনের মেয়র ছিলেন, তখন থেকেই মুনিরা তাঁর নীতি নির্ধারক হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। মুনিরা শুধু চলেই যান নাই, প্রধানমন্ত্রীকে ‘শব্দ বোমা’ মেরে গেছেন। ভয়ংকর যৌন নির্যাতক জিমি সাভলকে জড়িয়ে বিরোধী দলীয় নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার সম্পর্কে বাজে মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছেন। পদত্যাগপত্রে মুনিরা মির্যা লিখেছেন, বিরোধী নেতা সম্পর্কে ‘উদ্ভট’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ক্ষমা চাইতে বললেও, তিনি তা করেন নাই।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বরিস জনসন বলেছেন, তিনি বিরোধী নেতার ব্যক্তিগত রেকর্ড নিয়ে কথা বলেন নাই। ওইসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কিছুই করার ছিল না, সেটা তিনি পুরোপুরি বুঝতে পারেন। তিনি শুধু প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁর দায়িত্বের বিষয়টা তুলে ধরেছেন। কিন্তু তাঁর এই ব্যাখ্যা কেউই মেনে নিচ্ছেন না। হাউয অব কমন্সে বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের জন্য এখনো ক্ষমা চাইতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী।


তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের দিন হাউয ফ্লোরে বিরোধী নেতার সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাবলিক প্রোসিকিউশন্সের ডিরেক্টর থাকার সময় স্যার কেয়ার স্টারমার সাংবাদিকদের বিচার নিয়েই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত ছিলেন এবং জিমি স্যাভলের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এই অভিযোগের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন নাই। এমন অসত্য বক্তব্যের জন্য বিরোধী দলের পাশাপাশি তাঁর দলের অনেক এমপিও ক্ষোভ জানান। কারণ, কেয়ার স্টারমার যখন ক্রাউন প্রোসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান ছিলেন, তখন জিমি স্যাভলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয় নাই। তাছাড়া ওই মামলায় স্টারমার ব্যক্তিগতভাবেও জড়িত ছিলেন না।

জিমি স্যাভলের পরিচয়
টেলিভিশন ও রেডিও ব্যক্তিত্ব বিসিসি’র সাবেক উপস্থাপক জিমি স্যাভল ২০১১ সালে মারা যাওয়ার পর জানা যায়, তিনি ব্রিটেনের অন্যতম বড় যৌন অপরাধী ছিলেন। হাসপাতাল, স্কুল এবং বিবিসি’র অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত নারী ও শিশুকে যৌন নির্যাতন করেছেন জিমি স্যাভল। মৃত্যুর পর তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের শত শত অভিযোগ আসে। সেসব ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ জানায়, স্যাভল ছিলেন বৃটেইনের সবচেয়ে ভয়ংকর যৌন অপরাধীদের একজন। তিনি বেঁচে থাকার সময়ও এমন অভিযোগ এলেও সেগুলো আমলে নেয়া হয়নি। কয়েকজন অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেন স্যাভল। তার ছয় দশকের যৌন অপরাধ তদন্ত করে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড তাকে ‘শিকারী যৌন অপরাধী’ হিসাবে উল্লেখ করে। তার শিকার ছিল ৫ থেকে ৭৫ বছরের নারীরা।

একজন ঋষি সুনাক, এমপি
প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় যখন কেউ সন্তুষ্ট নন এবং সেই ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যার কারণে যখন প্রধানমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠজনেরা তাঁকে ছেড়ে যান, তখন চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার ঋষি সুনাক, এমপি প্রধানমন্ত্রীর খুব তারিফ করছেন। দলের বিভক্তিও খুব উপভোগ করছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তিনি খুবই খুশি যে, প্রধানমন্ত্রী কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা ব্যাখ্যা করেছেন এবং তাঁর জায়গায় তিনি থাকলেও এটাই বলতেন। বিবিসি’র ভাষায়, এই চ্যান্সেলর দেশের অর্থনীতি নিয়ে যেভাবে খেলছেন, সরকারের মর্যাদা নিয়েও সেভাবেই খেলছেন। লকডাউনে যেখানে অনুষ্ঠান হয়েছিল তিনি সেখানেই কাজ করেন। তারপরও তিনি দাবি করছেন, সেই ঘটনার তিনি কিছুই দেখেন নাই, কিছ্ইু জানেন না। অথচ তাঁর অফিস থেকে জানালা দিয়ে তাকালেই সেই অনুষ্ঠানের জায়গাটা দেখা যায়। বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তিনি অর্ধেক সময়ই কাটান ট্রেযারিতে, বাকি অর্ধেক সময় এখানে। আলোচিত ওই অনুষ্ঠানের সময় তিনি নাকি জনগণের উদ্বেগ দুর করার কাজে মনোযোগী ছিলেন। বরিস জনসনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের পর ক্যাবিনেট রুমে ঋষি সুনাককে দেখা গেছে একথা জানিয়ে বিবিসি জানতে চায়, সেই অনুষ্ঠান কি হয় নাই? ঋষি জবাব দেন, এটাতো দুই বছরের বেশি আগের কথা।

সেদিন তিনি একদল লোক নিয়ে সেখানে একটা বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন, যা তিনি সব সময়ই করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, ওই ঘটনায় সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে, জনগণ হতাশ হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকার বা রাজনীতিবিদদের কাজ। আরেক প্রশ্নের জবাবে চ্যান্সেলর জানান, তাঁর দলের অনেকে চাইলেও, তিনি চান না প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চলে যাক। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে। তিনি বরিসের স্থলাভিষিক্তও হতে চান না। সেদিকে তাঁর মনোযোগ নাই, তাঁর মনোযোগ নিজের কাজের দিকে। তাঁর এমন দ্বিমুখী আচরণের কারণ হয়তো শিগগিরি জানা যাবে। সরকারের বিশৃংখল সময় হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর মূল্য সরকারকে অনেক দিন দিতে হবে। আর চলমান সংকট সামাল দিতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে বিদায়ও নিতে হতে পারে।
বিবিসি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রধানত অনাস্থা জানিয়ে এরিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন ১৭ জন টোরি এমপি। দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য ৫৪ জনের সমর্থন দরকার। জনসনের প্রতি বিরোধীতার মুল কারণ, লকডাউনে জন্মদিনের পার্টি করা। তবে কারো কারো বিরোধীতার কারণ, লেইবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার রডনি স্টারমার সম্পর্কে তাঁর ভিত্তিহীন অভিযোগ।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com