Home Featured লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধন নিয়ে জিম জিনারোর গেইম

লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধন নিয়ে জিম জিনারোর গেইম

ক্ষুব্ধ বাংলাদেশি কমিউনিটি

Mukto Chinta
0 comment 341 views

মুক্তচিন্তা ডেস্ক : নিউইয়র্কের জ্যমাইকায় বাংলাদেশী অধ্যুষিত একটি সড়কের নামকরণ ‘লিটন বাংলাদেশ এভিনিউ’ করতে গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলম্যানের বিরুদ্ধে কমিউনিটিতে বিভিদ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। তবে কমিউনিটির অনৈক্যর কারণেই তিনি এই সুযোগ নিয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। উল্লেখ্য ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসে এই সড়কের নতুন নামকরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দৃষ্টিকটুভাবে কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো কমিউনিটির কোনো নেতাকে স্মান না দেখিয়ে একা একাই সবকিছু করেন। অথচ ডিস্ট্রিক্ট ২৪ এর এই এলাকার অধিকাংশ ভোটারই বাংলাদেশী। মূলত তাদের ভোটের উপর নির্ভর করেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
সড়ক উদ্বোধনের চারদিন পর গত ২৫ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, জিম জিনারো পুরো অনুষ্ঠানটি হাইজ্যাক করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের অভিযোগও তোলা হয়। এদিকে হোমলন ষ্ট্রীট নয়, হিলসাইড এভিনিউ-ই ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামে প্রতিকী নামকরণ করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানিয়ে বলা হয়, অসাবধানতাবশত: হোমলন ষ্ট্রীটটি ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে এবং সাইনটিও ভুলভাবে টাঙানো হয়। যা কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারোকে অবহিত করা হয়েছে এবং অতি দ্রæত সাইনটি ঠিক করা হবে।

কমিউনিটিতে যে অনৈক্য বিদ্যমান সেই অনৈক্যর সুযোগ নিয়েই কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারো এ কাজ করেছেন বলে সবাই মনে করছেন। সেই সাথে অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিম্যান জিম এফ জিনারো অনুষ্ঠানটি ‘হাইজ্যাক’ করে নিজের মতো করে পরিচালনা করেছেন, যা কারো কাম্য ছিলো না। অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়টি জিম জিনারোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা ছাড়াও প্রয়োজনে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশী কমিউনিটির এই বিজয়- কে সেলিব্রেট করা হবে। পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির আগামী নির্বাচনে কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রার্থী নির্বাচিত করার ব্যাপারে কমিউনিটির ঐক্যেও বিকল্প নেই বলে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।


অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রæয়ারী ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুরো কমিউনিটি অপমানিত হয়েছে। অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলায় না থাকলে অনুষ্ঠানটি আরো সুন্দর ও স্বার্থক হতে পারতো। আর এই না পারার ব্যর্থনা আমাদের কমিউনিটির অনৈক্য। অথচ নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা বাংলাদেশী অধ্যুষিত অগ্রসরমান কমিউনিটি। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশীদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ২৪ মাথায় রেখে কমিউনিটির ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোটার সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে মেইন ষ্ট্রীম রাজনীতিতে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের ভয়েজও প্রকারন্তরে জোরদার হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মূলধারার রাজনীতিকরা বাংলাদেশী আমেরিকান ভোটারদের প্রয়োজন মনে করেন। আজ আমেরিকানরা স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে জানতে পারছে। যেটা ৩০ বছর আগে ছিলো না। কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসেবে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজে অপমানিত হয়েছি। তাই আগামী দিনে কোন ভুল বুঝাবুঝি বা অনৈক্য নয়, মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের পথ সুসংহতকরার জন্যই এই সংবাদ সম্মেলন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আগামী দিনে সিটি কাউন্সিলে আমরা ‘আরো শাহানা হানিফ’ প্রয়োজন। নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ২৪ থেকে একজন বাংলাদেশী নির্বাচিত হওয়া দরকার বলেও তিনি বলেন।
নাসির আলী খান পলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, অ্যাসাল’র সভাপতি মাফ মিসবাহ উদ্দিন ও ফার্মাসিস্ট আওয়াল সিদ্দিকী। এ ছাড়া ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনে কাউন্সিলম্যানের অফিসের সাথে সমন্বয়কারী ৭জন যথাক্রমে মোহাম্মদ আলী, রেজাউল করীম চৌধুরী, ড. দিলীপ নাথ, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মোহাম্মদ তুহিন, বাহলুল সৈয়দ উজ্জল ও রাব্বী সৈয়দ, মিনহাজ আহমেদ সাম্মু ও এএফ মিসবাহউজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে নাসির আলী খান পল বলেন, একুশের অনুষ্ঠানে যা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ কমিউনিটি, বাংলাদেশ, দেশের পতাকা অপমানিত হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবাঙালীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আমাদের অনৈক্য আর নেতৃত্বের ব্যর্থতাই এজন্য দায়ী। তবে সেদিন কি হয়েছে সেটা আজকের বিষয় না, মুল বিষয় হচ্ছে আগামীদিনে যাতে আর একই ভুলের পূনরাবৃত্তি না হয় এবং বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি। তিনি তার দীর্ঘ দিনের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, আজকের বাংলাদেশী কমিউনিটি একদিনে গড়ে উঠেনি। অনেক কাঠখড় পুরিয়ে কমিউনিটি সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই কমিউনিটির মান-সম্মান আমাদের মান-সম্মান। এজন্য ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
মোর্শেদ আলম তার বক্তব্যে দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা দেশে রাজনীতি করতাম বলেই প্রবাস জীবনে এসে কমিউনিটি অ্যাকটিভিটির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। যাতে আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমরা বড় কমিউনিটি কিন্তু ঐক্যবদ্ধ নই। যার সুযোগে কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো আমাদের অপমান করেছেন। আমাদের অনুষ্ঠান তিনি করেছেন। আমাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি তা করতে পারেন না। এর প্রতিকারের জন্য তার কাছে যেতে হবে।
মাফ মিসবাহ উদ্দিন তার বক্তব্যে একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান হিসেবে মূলধারার রাজনীতি ও ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, সময় এসেছে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আমাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতা আর অনৈক্যের কারণে আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ একটু ত্যাগ স্বীকার করলে আমরা আরো অনেক বড় বড় কাজ করতে পারি। তিনি আগামী নির্বাচনে কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক ২৪ থেকে একজন যোগ্য বাংলাদেশী-আমেরিকানকে প্রার্থী করার জন্য কমিউনিটির প্রতি আহŸান জানান।
আওয়াল সিদ্দিকীও তার দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার কতা তুলে ধরে বলেন,প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় আরও সম্পৃক্ত হতে হবে। তিনি বলেন, ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা হয়েছে তার আর পুরনাবৃত্তি হতে দেয়া যাবে না। কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ অর্জন কমিউনিটির বড় পাওয়া।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের আগামী দিনের টার্গেট আসন্ন নির্বাচনে ডিষ্ট্রিক্ট ২৪ থেকে বাংলাদেশী-আমেরিকানকে নির্বাচিত করা। সেই লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভূল-ত্রæটি শুধরে মিলে-মিশে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে, ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সেদিন আমরা অসহায় ছিলাম। বক্তা হিসেবে আমাদের পাঠানো তালিকা মানা হয়নি। যার জন্য আমরা অপমানিত হয়েছি।
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট এবং জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার অনুষ্ঠানটি আয়োজনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ নামকরণ অবশ্যই একটি বড় অর্জন, তবে এই সম্মান একদিনে কিংবা একজনের চেষ্টায় অর্জিত হয়নি। কিন্তু সাপ্তাহিক বাঙালী পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম খবরে এই অর্জনের কৃতিত্ব একজনকে দেওয়া হয়েছে যার ফলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাঙালী সম্পাদক জনাব কৌশিক আহমেদ- কে আমি জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডানোভান রিচার্ডসেরও ভূমিকা ছিলো এবং তিনি চেয়েছিলেন বরো হল এবং কাউন্সিল মেম্বার অফিস মিলে যৌথভাবে নাম ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হবে। কিন্তু কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো একাই অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বরো প্রেসিডেন্ট ডানোভান রিচার্ডস আর অনুষ্ঠানে আসেননি। তিনি অনুষ্ঠানটির সকল ভুল-ত্রæটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
প্রসঙ্গত তিনি বলেন, অনুষ্ঠানটিকে বর্ণাঢ্য করতেই জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় পতাকাসহ ব্যানার, পোষ্টার আর কয়েকজন অতিথির জন্য উত্তরীয় নিয়ে যায় এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কাউন্সিলম্যানকে প্ল্যাক দেয়।
বাহলুল সৈয়দ উজ্জল বলেন, জ্যামাইকায় আজকের বাংলাদেশ কমিউনটি একদিনে গড়ে উঠেনি। আজকের লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ কারো বা কোন সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের একার অবদান নয়। এজন্য সকল বাংলাদেশী-ই কৃতিত্বের দাবীদার। আমরাও অতীতে সফলতার সাথে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। তবে এমন অনুষ্ঠান আগে হয়নি। আগামীতে যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আরো বড় অর্জন করতে পারি সেটিই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ এবং সেই লক্ষ্যেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মোহাম্মদ তুহিন বলেন, সবার অবদানের ফসল আজকের লিটন বাংলাদেশ এভিনিউ। তাই একে অপরের দোষ-ত্রæটি ধরে পিছনের দিকে নয়, আমাদেরকে সামনের দিকে এগুতে হবে। আমরা কে কোথায় থাকি সেটি বড় কথা নয়, আমরা সবাই কমিউনিটির জন্য কাজ রছি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করতে হবে।
রাব্বী সৈয়দ বলেন, অনুষ্ঠানটি আয়োজনে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে সত্য, তবে তা ইচ্ছেকৃত নয়। আর ঐদিন পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠে যে আমার কি করনীয় তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগুতে চাই, সবার সহযোগিতা চাই।

 

 

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com