Home আর্ন্তজাতিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আত্মসমর্পন ও গ্রেফতার

Mukto Chinta
0 comment 32 views

মুক্তচিন্তা ডেস্ক  : যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই প্রথম। এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের এবং সেই মামলার কারণে আদালতে আত্মসমর্পনের ঘটনা দেশটির স্বাধীনতার আড়াইশ বছরে আর ঘটেনি। অতীতে না ঘটলেও এই ঘটনা যে আবারও ঘটতে পারে সেটা ট্রাম্পের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই তার আগাম বার্তা বহন করছে বলে অনৈকেই মনে করছেন।
২০১৬ সালে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলকে অবৈধভাবে অর্থ দিয়ে তার মুখ বন্ধ রাখার অভিযোগের মামলায় আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওইদিনই ফ্লোরিডায় ফিরে যান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্র সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান’র।

আদালতে প্রবেশ করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প । ছবি : সংগৃহীত

মঙ্গলবার বিকেলে নিউইয়র্কের লোয়ার ম্যানহাটনের আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকরা বেশ চিৎকার করে প্রশ্ন করলেও জবাব দেননি তিনি।
প্রায় দুই ঘণ্টা আদালতে ছিলেন ট্রাম্প। আঙুলের ছাপ দেওয়া ও ছবি তোলাসহ কিছু কার্যক্রমের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তিনি আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন, অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়, নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এরপর তিনি নিজের গাড়িবহরে করে আদালত ছাড়েন। আগামী ৪ ডিসেম্বর ট্রাম্পের উপস্থিতিতে এ মামলার শুনানি হবে।

আগামী নির্বাচনে কি প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারবেন ট্রাম্প?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়েরের পর থেকেই প্রশ্ন উটেছে তিনি কি আর আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন? কিংবা নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা কি তার থাকবে? মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হতে হয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। যদিও গ্রেপ্তারির কিছুক্ষণ পরে তিনি ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ৩৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত ওয়াকিবহাল মহলে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন, রবি বাটরা নামের অ্যাটর্নি। তার কথায়, ‘এই মামলা যদি দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে তাহলে খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। অর্থাৎ ২০২৪ সালে যখন নির্বাচন হবে, তখনও মামলাটির নিষ্পত্তি হবে না। এমনকী নির্বাচনের আগে এটার নিষ্পত্তি ঘটানোর চেষ্টাও হয়তো করা হবে না।’ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা বেশ গুরুতর বলেও দাবি করেছেন তিনি।
তার মতে নির্বাচন হয়তো করতে পারবেন। কিন্তু নির্বাচন করে সেই নির্বাচনে যদি জিতে ফের প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প, তাহলে কি অব্যাহতি পেতে পারেন তিনি এই মামলা থেকে? সেই সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন রবি। তিনি জানিয়েছেন, ‘ধরে নেয়া যাক তিনি জিতেই গেলেন, সেক্ষেত্রে হয়তো সাজাপ্রাপ্তিতে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু অব্যাহতি তিনি পাবেন না। তিনি নিজেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন না। এমনকী, অন্য কেউও তাকে অব্যাহতি দিতে পারবেন না।’ তার ব্যাখ্যা, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘স্টেট ক্রাইমে’র পর্যায়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে একমাত্র কোনও স্টেট গভর্নর তাকে অব্যাহতি দিতে পারেন। ফলে নিউইয়র্কের আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলে নিউইয়র্কের গভর্নরই পারবেন কেবল ক্ষমা করতে। নিউইয়র্কে সাম্প্রতিক সময়ে সব সময়ই ডেমোক্রেটরাই গভর্নর নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
যদি মামলাটি ফেডারেল কোর্টে উঠত, সেক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে ট্রাম্পকে অব্যাহতি দিতে পারতেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই। ফলে ট্রাম্পের অব্যাহতির পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় নেই, যদি শেষ পর্যন্ত তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। কেননা যে প্রদেশে এটা বিচার্য হবে, সেখানে রিপাবলিকান কোনও গভর্নর থাকবেন না। ফলে ট্রাম্পের ছাড় পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সূত্র: টাইমস নাউ।

ফ্লোরিডা ফিরেই উত্তেজিত বক্তব্য ট্রাম্পের
আদালতে হাজিরা দিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ব্যক্তিগত বিমানে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোয় ফিরেই জো বাইডেন প্রশাসনকে তুলোধোনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রাপ্তবয়স্কদের ছবির অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার দায়ে অভিযুক্ত ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনকে সরাসরি নিশানা করতে গিয়ে হাতিয়ার হিসাবে তুলে নিলেন তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপকে। ফ্লোরিডায় নিজের সমর্থকদের বললেন, ‘আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আমেরিকায় এমন কিছু হতে পারে। আমার অপরাধ ছিল শুধু দেশরক্ষায় দৃঢ়তা প্রদর্শন।’
আমেরিকার প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি মোকদ্দমার মুখে পড়েছেন তিনি। আদালতে পৌঁছনোর পরেই নিয়ম মেনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে তাকে শুনানির জন্য আনা হয় বিচারকের সামনে। ট্রাম্প গ্রেফতার হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পুলিশ বা জেল হেফাজতে তাকে থাকতে হবে না। সেই অনুযায়ী, হাজিরা শেষ হওয়ার পরই ব্যক্তিগত বিমানে ফ্লোরিডা ফিরে যান তিনি। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন ক্রিমিনাল কোর্ট হাউসে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে অবশ্য একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। কথা ছিল, মার-এ-লাগোয় ফিরে মুখ খুলবেন। ব্যক্তিগত বিমান ফ্লোরিডায় প্রবেশ করতেই জল্পনা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত সমর্থকদের সামনে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। আর তা করতে গিয়ে বার বার নিশানা করেন আমেরিকার বর্তমান প্রশাসনকে। বলেন, ‘দেশ রসাতলে যাচ্ছে।’
ট্রাম্পের অভিযোগ, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি যাতে কোনও ভাবেই লড়াইয়ে থাকতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাই পাকা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ সমস্ত ভুয়া মামলা করা হয়েছে কেবলমাত্র ২০২৪ সালের ভোটকে প্রভাবিত করতে। অবিলম্বে সবক’টি মামলা খারিজ করা দরকার।’ তার পরেই বাইডেন প্রশাসনকে নিশানা করে বলেন, ‘যে কোনও মূল্যে আমাকে ভিতরে ঢোকানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে অতি বামপন্থী বিচারকদের।’
প্রসঙ্গত, আদালত থেকে ট্রাম্পকে বলা হয়েছিল, এমন কোনও মন্তব্য করা যাবে না যা সহিংসতায় উস্কানি দেয় বা সমাজে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করে। পর্যবেক্ষকদের একটি অংশের মতে, সে কথা মাথায় রেখেই বাইডেনের নাম নেননি ট্রাম্প। যদিও অন্য একটি অংশের দাবি, ট্রাম্প বাইডেনের নাম নেননি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে।
ঘটনাবলি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে ট্রাম্প ২০২৪-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছে। একটি অংশের দাবি, ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত কোনও বিষয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার শর্ত হিসাবে নেই। ফলে আইনগত ভাবে ট্রাম্পের তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, জনতার সমর্থন তখন তার দিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে। সম্ভবত ৪ ডিসেম্বর ট্রাম্প আবার আদালতে হাজিরা দিতে যাবেন। সূত্র : রয়টার্স।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মামলার শুনানিতে আদালতে যা হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ম্যানহাটনে আদালত কক্ষে একজন অভিযুক্ত হিসাবে প্রবেশ করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার চারপাশে ঘিরে ছিল সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। সেই সময় তার পরনে ছিল তার সিগনেচার ড্রেস নীল স্যুট আর লাল লম্বা টাই। যেটা সব সময়ই তার কোমরের নিচে পর্যন্ত ঝুলে থাকে।
আদালত কক্ষের সামনের দিকে তার জন্য নির্ধারিত জায়গার দিকে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, যেখানে তার আইনজীবীরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন তার চেহারা ছিল বিষন্ন এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত। তবে চেহারায় ছিলো সুষ্পষ্ট রাগের ছাপ।
এর আগে তিনি ম্যানহাটনের আদালতে হাজির হলে প্রক্রিয়ামাফিক আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি নেয়া হয়। যার মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যদিে কিছুদিন ধরেই মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়ে আসছিলো তাকে হ্যান্ডকাফ পড়ানো হতে পারে। কিন্তু সেটা অবশ্য পড়ানো হয়নি।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কখনোই কোন কথা বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি অভিব্যক্তি বা শারীরিক ভাষার মাধ্যমেও কিছু প্রকাশ করেননি। বিচারক মার্চিন জানিয়েছেন, সামনের বছর জানুয়ারি মাস নাগাদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সামনের বছর যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়বেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন তাকে আবার আদালতেও হাজিরা দিতে হবে।

৩৪টি গুরুতর অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষতি হতে পারে, এমন তথ্য লুকাতে তিনি নকল কাগজপত্র তৈরি করেছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক পর্ন তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে অর্থ ঘুষ দিয়েছিলেন। পর্ন ছবির ওই তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েল জানিয়েছিলেন ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আদালত থেকে ফ্লোরিডায় ফিরে যাওয়ার পর মার-এ লাগোর বাড়িতে ফিরে গিয়ে অভিযোগ করেন, এসব মামলার মানে হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা।
বিবিসির সংবাদদাতা কাইলা ইপস্টেইন বলছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির আসনের সরাসরি পাঁচ সারি পেছনে একদল সাংবাদিকের সাথে আমি বসেছিলাম। পুলিশের একটি দল সেখানে নজরদারি করছিল। আদালতে আমাদের ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছিল।
যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫ তলা নীচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠান্ডাভাবেই আদালত পরিচালনা করছিলেন। এমনকি তিনি আওয়াজও বৃদ্ধি করেননি।
শুনানির সময় বেশিরভাগ সময় জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি।
যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪ ধরনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক, মি. ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি’। অর্থাৎ আমি দোষী না।
এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কিনা? ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ’।
এরপর বিচারক বলেন, অন্য যেকোন অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘœ সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন।
যখন আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন, প্রসিকিউটররা উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুমকিমূলক পোস্ট করেছিলেন যার মধ্যে একটিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে সম্ভাব্য ‘মৃত্যু এবং ধ্বংস’ সম্পর্কে হুমকি দেয়া হয়।
মি. ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, তাদের মক্কেল এই মামলায় হতাশ এবং বিরক্ত ছিলেন। যা তিনি অবিচার বলে মনে করেন।
তবে বিচারক বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, ‘’আমি আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নই যে, হতাশাকে বিদ্বেষমুলক বা বাজে ভাষা ব্যবহারের যুক্তি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।‘’
বিচারক মার্চান বলেন, এ ধরনের উত্তেজিন বক্তৃতা না দেয়ার ব্যাপারে তার সতর্ক করে দেয়ার বিষয়টি কোন আদেশ নয়, বরং অনুরোধ ছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম ঘটলে তিনি বিষয়টিকে ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করতে বাধ্য হবেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর শুনানি শেষ করেন বিচারক।
এরপর মি. ট্রাম্প উঠে দাঁড়ালে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। আইনজীবীদের সঙ্গে শান্তভাবে তিনি কথা বলছিলেন। তবে তার কয়েক সারি পেছনে বসে থাকা সাংবাদিকরা সেসব কিছুই শুনতে পাননি।
এরপর তিনি ঘুরে আদালতের মধ্যে প্যাসেজে চলে যান এবং পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। বাইরে অসংখ্য টেলিভিশন ক্যামেরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কিছু বলেননি। তার অভিব্যক্তি ছিল বেশ গম্ভীর।

মিডিয়া কর্মিদের কর্মব্যস্ত সময়
ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতে আসছেন এটা ছিলো নিশ্চিত। এটা জানার পর পরই দেশ-বিদেশের শত শত টিভি এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা দু’দিন আগে থেকেই জমায়েত হতে শুরু করেন কোর্ট এলাকায়। বিশ্বের প্রথম সারির সব টিভি মিডিয়া তাদের ক্যামেরা ও ক্যামেরা ক্রুদের নিয়ে প্রস্তুত হন দুদিন আগে থেকেই। সারা রাত সেখানেই বসানো ছিলো ক্যামেরার স্ট্যান্ডগুলো। ছোট ছোট মঞ্চ করে তার উপরে রাখা ছিলো লাইভ করার সব যন্ত্রপাতি। লাইভ করার অভি ভ্যান ছিলো শতাধিক। প্রিন্ট সিডিয়া ছাড়াও সোস্যাল মিডিয়ার কর্মিরাও ছিলো ব্যস্ত। সবাই কেই লাইভ করছিলো। কেউ কেউ টেলিফোনে সংবাদ জানাচ্ছিলো অফিসকে। একাধিক সাংবাদিক জানান, তাদের জানামতে পৃথিবীতে এর আগে স্বরণকালে আর কোনো ইভেন্ট হয়নি যেখানে এক সংখ্যক টিভি ক্রু বা ক্যামেরা লাইভ করেছে।

প্রতিদ্বন্ধি হিলারিকে জেলে ভরতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প
ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করার পর দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন একেবারেই নীরব ছিলেন। যদিও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা জুড়ে ডনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা নিয়মিতভাবেই “হিলারিকে জেলে ঢুকাও” স্লোগান তুলেছিল।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ ট্রাম্প গ্রেপ্তার হওয়ার পর হিলারি টুইটারে একটি বার্তা পোস্ট করেন যার মাধ্যমে তিনি উইসকনসিন এর ভোটারদের রাজ্যটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে তিনি কিছুই লিখেন নি।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প কর্তৃক উৎসাহী হয়ে তার সমর্থকরা নিয়মিতভাবে কটূক্তি করে হিলারিকে গ্রেপ্তারের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
সেই প্রচারণার সময় এবং তার পরের বছরগুলোতে ট্রাম্প নিয়মিতভাবেই বলে বেড়াচ্ছিলেন যে, হিলারি অপরাধ করেছেন এবং তার শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত। হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় সরকারি কাজের জন্য ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করেছিলেন মর্মেই ওই অভিযোগ করা হয়েছিল।

পর্ন তারকার মামলায় ট্রাম্পের বিজয়
পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আপিল আদালত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীদের আইনি ফি হিসাবে ১,২০,০০০ ডলারের বেশি অর্থ প্রদানের আদেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার নবম ইউএস সার্কিট কোর্ট অফ আপিল ড্যানিয়েলসের আপিল খারিজ করে দিয়ে এই অর্থ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাম্পের অ্যাটর্নিদেরকে আদালতের নির্দেশিত ৫০০,০০০ ডলারের সাথে তাকে অতিরিক্ত হিসেবে এই অর্থ দিতে হবে। অথচ এই স্টর্মির মুখ বন্ধ করার অভিযোগেই নিউ ইয়র্কে অভিযুক্ত হয়েছেন ট্রাম্প। তাকে মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাকে মুক্তিও দেয়া হয়।
স্টর্মি ড্যানিয়েলস সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন। এই মামলায় তিনি হেরে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। আদেশটি একই দিনে দেয়া হয়েছিল যেদিন ম্যানহাটনের একটি আদালত ট্রাম্পকে দুজনের মধ্যে একটি সম্পর্ক ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগের জন্য ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেয়ার সাথে সম্পর্কিত ৩৪টি অভিযোগে দোষী করেছিল।
নিউইয়র্কের একটি গ্র্যান্ড জুরি বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার ২০১৬ সালের প্রচারের সময় একজন পর্ন তারকাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থ প্রদানের দোষে অভিযুক্ত করেছে। এর ফলে তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। ৭৬ বছর বয়সী রিপাবলিকান তার নির্বাচনের আগে করা এই অর্থপ্রদানের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিউইয়র্ক রাজ্যের আইন অনুসারে, ব্যবসায়িক রেকর্ডে মিথ্যা জিনিস দেখিয়ে প্রচার-অর্থনীতি লঙ্ঘন একটি ‘নিম্ন-স্তরের অপরাধ’। এই অপরাধের শাস্তি চার বছর পর্যন্ত কারাদন্ড। তবে মার্কিন আইন অভিযুক্ত বা কারাগারে থাকা ব্যক্তিকে ওভাল অফিসের পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবং এমনকি রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ করারও অনুমতি দেয়।
ড্যানিয়েলস ২০১৮ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। ওই সময় ট্রাম্প একটি ট্যুইট বার্তায় ড্যানিয়েলসের একটি অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। ড্যানিয়েলসের দাবি ছিল যে একজন অজানা লোক ট্রাম্পের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে চুপ থাকার জন্য পার্কিং লটে হুমকি দিয়েছিল। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মামলাটি খারিজ করে, ফেডারেল বিচারক এস জেমস ওটেরো বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য প্রথম সংশোধনী দিয়ে সুরক্ষিত ছিল।
ওটেরো ওই সময় লিখেছিলেন, ‘আদালত ট্রাম্পের যুক্তির সাথে একমত কারণ প্রশ্নে থাকা ট্যুইটটি সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতি এবং জনসাধারণের বক্তৃতার সাথে যুক্ত দঅলঙ্কারপূর্ণ হাইপারবোলদ গঠন করে। প্রথম সংশোধনী এই ধরণের অলঙ্কৃত বিবৃতিকে রক্ষা করে’।
ওটেরো পরে ড্যানিয়েলসকে আইনি ফি হিসেবে প্রায় ২,৯৩,০০০ মার্কিন ডলার প্রদানের নির্দেশ দেন। আরেকটি আপিল হারার পর ড্যানিয়েলসকে আরো ২,৪৫,০০০ মার্কিন ডলার ফি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
ড্যানিয়েলস, যার আইনি নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড, আপিল আদালতকে অন্য একটি শাস্তি বাতিল করতে বলেছিলেন। আদালত তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। নবম সার্কিট ফাইলিং জানায়, ‘ক্লিফোর্ডের যুক্তি যে ফি প্রদানের অনুরোধটি অযৌক্তিক এবং অত্যধিক তা সঠিক নয়’।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, ড্যানিয়েলসের সাবেক আইনজীবী মাইকেল অ্যাভেনাত্তির দায়ের করা একটি ব্যর্থ মানহানির মামলার পরে ড্যানিয়েলস বলেছিলেন যে ট্রাম্পকে একটিও পয়সা দেয়ার আগে তিনি ‘জেলে যাবেন’। সূত্র : সিএনএন, এপি

ট্রাম্পের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি আগামী নির্বাচন?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলাকে কেন্দ্র করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নজরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন। সোমবার যখন ফ্লোরিডায় তার প্রাসাদ-সম বাড়ি মার-এ-লাগো থেকে নিউ ইয়র্কে আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য তিনি রওয়ানা হন তখন থেকে পুরোটা পথই বলতে গেলে মার্কিন টিভি নেটওয়ার্কগুলো লাইভ প্রচার করেছে।
পথে তিনি সম্ভবত তার উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করছিলেন কিভাবে, কোন কায়দায় আদালতের প্রক্রিয়াগুলো তার সামাল দেওয়া উচিৎ- তিনি কি আদালতে এই মামলাকে হাসিমুখ করে তাচ্ছিল্য করবেন, নাকি মুখভঙ্গি- চালচলন গুররুগম্ভীর করে রাখবেন? তবে যেটা সত্যি, তা হলো আদালত মঙ্গলবার যা হবে তাকে কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারণা বলা যাবে না। অপরাধের মামলায় আমেরিকার কোনও সাবেক প্রেসিডেন্টের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো খুবই গুরুতর একটি ঘটনা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো মি. ট্রাম্প কি এই অপরাধের মামলাকে রাজনীতির তকমা দিতে সমর্থ হবেন? একে কি তিনি নির্বাচনী অস্ত্রে রূপান্তর করতে পারবেন? পারলেও কতটা পারবেন? বিবিসি’র উত্তর আমেরিকার সম্পাদক সারা স্মিথ এসব নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। যেটা হুবহু মুক্তচিন্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর থেকে তার নির্বাচনী প্রচারণা টিমের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে যে মানুষজনের কাছ থেকে বেশি চাঁদা আসছে। এক সপ্তাহে ৮০ লাখ ডলার চাঁদা পেয়েছেন বলে তারা দাবি করেছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপ উল্লেখ করে ট্রাম্প শিবির বলছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা তার বেড়ে গেছে। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের চেয়ে জনপ্রিয়তার দৌড়ে তিনি এগিয়ে গেছেন।
সন্দেহ নেই মি. ট্রাম্প শিবির থেকে এরকম আতিশয্য শোনা যাবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা লক্ষণীয় তা হলো রিপাবলিকান পার্টিতে যারা তার প্রতিপক্ষ তাদের অনেকে যেভাবে মি. ট্রাম্পের সমর্থনে কথা বলছেন বা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন।
যেমন, ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর রান দ্যসান্তিস –যাকে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দেখা হচ্ছে – বলেছেন, “বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক এজেন্ডা চরিতার্থ করলে আইনের শাসন নষ্ট হবে।”
তিনি বলেন বিচারের জন্য ফ্লোরিডা থেকে মি. ট্রাম্পকে যদি জোর করে নিউইয়র্কে পাঠানোর কোনও অনুরোধ তাকে করা হয়, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন।
অবশ্য তেমন কোনও অনুরোধ আদালতকে করতে হয়নি, কারণ মি. ট্রাম্প নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নিউইয়র্কে হাজির হয়েছেন।
মি. ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন এই মামলা বাকি বিশ্বের কাছে মার্কিন বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে “ভয়াবহ বার্তা” দেবে।
রিপাবলিকান এসব রাজনীতিক অবশ্যই এসব কথা বলছেন তাদের ভোটার এবং সমর্থকদের কথা মাথায় রেখে। কারণ, তারা জানেন বহু রিপাবলিকান ভোটার এখন এসব কথা শুনতে চান।
ফলে রিপাবলিকান পার্টির প্রাইমারি অর্থাৎ প্রার্থী নির্বাচনের ভোটে মি. ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আসা এই মামলাকে কাজে লাগাতে পারেন। কারণ ঐ ভোটে ভোট দেবেন রিপাবলিকান সমর্থকরা।
তবে অনেক বিশ্লেষক সন্দেহ করেন মূল নির্বাচনের ভোটে এই কৌশল তার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
জর্জিয়া থেকে শুরু করে উইসকনসিন- যুক্তরাষ্ট্রের এ কোনা থেকে আরেক কোনায় অনেক মানুষের সাথে আমি কথা বলেছি যারা কোনও রাজনৈতিক দলের ঘোর সমর্থক নন। বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের আনুগত্য বদলায়। তাদের অনেকেই আমাকে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনেক নীতি-কর্মসূচি তারা পছন্দ করতেন। কিন্তু তাকে নিয়ে যে নাটক এখন চলছে তাতে তারা ক্লান্ত, বিরক্ত।
ফলে এই মামলাকে যদি মি. ট্রাম্প রাজনৈতিক নাটকে রূপ দিতে চান, তাহলে ২০২৪ সালের নভেম্বরে হোয়াইট হাউজে নতুন করে ঢোকার ভোটে অনেকের সমর্থন তিনি হারাতে পারেন।
সোমবার ম্যানহাটনে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে কথা হয় কট্টর ট্রাম্প সমর্থক জন ম্যাগুইগানের সাথে। তিনি মনে করেন এই মামলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মি. ট্রাম্পকে সুবিধা দেবে।
“যারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে মি. ট্রাম্প সাক্ষাৎ শয়তান রূপে জন্ম নিয়েছেন, তাদের এই মামলার ফলাফলে কোনও সুবিধা হবেনা। মামলার ফলাফলে মি. ট্রাম্পের সমর্থকদেরও আনুগত্য বদলাবে না,” তিনি বলেন।
কিন্তু, তার মতে, “যেসব ভোটার মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছেন, ২০২৪ নির্বাচনে তারা ট্রাম্পের পক্ষে ভিড়তে পারেন।”

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com